Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মুক্তিযুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ


মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানীগঞ্জ

নোয়াখালী

 

          মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসের একটি অন্যতম ভয়াবহ যুদ্ধ যাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছেন ৩০ লক্ষ নারী পুরুষ এবং যাদের সিংহভাগই ছিলো নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, মুক্তিযুদ্ধ বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ সংগ্রাম আর স্বাধীনতা হচ্ছে শ্রেষ্ট অর্জন। কেবলমাত্র গুটিকয়েক বিশ্বাস ঘাতক ছাড়া আপামর সব বাঙালী এ সংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন। রাজনীতিবিদ ,সৈনিক, শিক্ষক ,ছাত্র,কৃষক, দিনমঝুর, ক্ষেতমজুর ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার সবার প্রচেষ্টাই এই সংগ্রামকে দিয়েছিলো সফলতা। মুক্তিবাহিনী ছিল সাহস এবং  দৃঢ়তার প্রতীক। আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিতও সুপ্রশিক্ষত পাকিস্তানী  সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বল্প প্রশিক্ষিত মুক্তি বাহিনীর বীরোচিত সংগ্রাম সমগ্র পৃথিবীকে অবাক করে দিয়েছিল । এবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের কথায় আসি। ব্রিটিশ বিরোধী  অন্দোলন, আইয়ূব বিরোধী  আন্দোলন, আইয়ূব বিরোধী  আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলনে এবং বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে কোম্পানীগঞ্জের মানুষ এক অনন্য ভূমিকা পালন করে,

                                                                                                                                                                                                                                                                    

মিশন কোম্পানীগঞ্জ: ০৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ঃ   মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রনকৌশল অনুযায়ী একদিকে বসুরহাট রাজাকার ক্যাম্প আক্রমনের প্রস্ততি, অপরদিকে বিনা রক্তপাতে রাজাকারদের আত্নসর্ম্পন প্রক্রিয়াও চলতে থাকে। দুপুরের দিকেই বসুরহাটের পরিবেশ দ্রত বদলে যায়, ভারতের স্বীকৃতির খবরের পর একদল মুক্তিপাগল মানুষ প্রবল উচ্ছাসে ফেটে পড়ে। দলে দলে মানুষ থানায় অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্প খেরাও করতে উদ্যত হয়। রাতের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্পের চারিদিকে অবস্থান নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডেপুটি কমান্ডার খিজির হায়াত এর উপর দায়িত্ব পড়ে থানা আক্রমনের । তখন কোম্পানীগঞ্জ থানার দুটি বিল্ডয়ের মধ্যে একটিতে থাকত পাকিস্তান সরকারের অনুগত পুলিশ অন্যটিতে আনসার ও রাজাকার মিলিশিয়ারা । রাজাকারদের আত্নসর্ম্পন করানোর উদ্দেশ্যে রাজাকার কমান্ডার আক্তারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। দূত হিসেবে কাজ করেন বসুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হাসেম । সন্ধ্যায় আবুল হাসেমের মাধ্যমে পুলিশ ও রাজাকার মিলিশিয়াদের কাছে আত্নসর্ম্পনে প্রস্তাব পাঠান মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার, প্রসত্মাবটি পৌঁছালে থানার ওসি আবু তাহের মোল্লা,দারোগা কুদ্দুছ এবং রাজাকার কমান্ডার আক্তারুজ্জামান তাতে সাড়া দেন। কমান্ডার আক্তারুজ্জামান দারোগাদেরকে সঙ্গে নিয়ে থানার  উত্তর দিকে দেয়াল টপকে পালিয়ে এসে আত্নসর্ম্পন করেন। ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে থানা থেকে এক এক করে ৯০ জনের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ভাবে ১৯৭১ এর ০৭ ডিসেম্বর ভোরে বসুরহাট মুক্তি হয়।

 

১৪ আগষ্ট,১৯৭১ ঃ ১৪ আগষ্ট ১৯৭১ এর বৃষ্টি ভেজা ভোর, পাকিস্তানী  স্বাধীনতা দিবস সেদিনের সেই মেখলা প্রভাতে ষ্ঠেনগান ,এল এম জি  থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলির শব্দে কেঁপে উঠলো বসুরহাট শাখা কোম্পানীগঞ্জ কেউ কিছু টের পাওয়ার আগেই একদল মুক্তিযোদ্ধা ( যাদের অধিকাংশ সুধারাম ও বেগমগঞ্জের কৃতি সন্তান) কোম্পানীগঞ্জ থানায় অবসিহত রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন করে। আনন্দ ও কুচকাওয়াজের বদলে রাজাকার নিহত হয়েছিল, আহত হয়েছিল কয়েকজন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই সফল আক্রমনের কায়েকদিন পরই পাক মিলিশিয়ারা বসুরহাট, চৌধুরীহাট, চারাশিরহাট,তালেরব মোহাম্মদ হাট চরফকিরায় তাদের ক্যাম্প সহাপন করে ।

 

তাল মোহাম্মদ হাটের যুদ্ধঃ যুদ্ধটি শুরু হয় ২১ নভেম্বর,১৯৭১ রাত ৩টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত। । এই যুদ্ধের মূল পরিকল্পনা করেছিলেন জেলা বি.এল.এফ কমান্ডার মাহমুদুর রহমান বেলায়েত্ও ফিন্ড কমান্ডার ওবায়দুল কাদের । তাল মোহাম্মদ হাটের গোডা উনে (বর্তমানে বামনী কলেজ) ৩০/৪০ জন মিলিশিয়া ও  রাজাকারের একটি ক্যাম্প ছিল। এরা সাধারণ লোকজনের উপর অমানুষিক নির্যাতন করতো। সদর ও বেগমগঞ্জের ২৭/৩০ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধাদের দল সুসংগঠিত হয়ে শক্রর এই ক্যাম্পের উপর আক্রমন পরিচালনা করে । যুদ্ধে সদর থানা কমান্ডার সাবেক ডাকসুর সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক অহিদুর রহমান (অদুধ) শহীদ হন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের সদরে আনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডেপুটি কমান্ডার জনাব আবুল কাশেম। এই যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধা সোনাপুর এলাকার মাঈনউদ্দিন জাহাঙ্গীর যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ  অবদান রাখার পরবর্তী পর্যায়ে বীর প্রতীক পদকে ভূষিত হন।

 

বেড়ী বাঁধের যুদ্ধঃ ১৯৭১ এর ০৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জ দক্ষিণে বেড়ীবাঁধে ঘটে যায় এক রক্তক্ষয়ী  যুদ্ধ। সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল বামনী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সিভিল অপারেশনকে কেন্দ্র করে । মুক্তিযোদ্ধারা দু’’দলে বিভক্ত হয়ে খিজির হায়াতের কমান্ডে একটি দল রামপুরের দিকে আর আবদুর রাজ্জাকের কমান্ডে অন্যদলটি মুছাপুর অপারেশনে বের হয় চরফকিরা ইউনিয়নের বাঞ্জারাম বামনী বেড়ী বাঁধের মাঝামাঝি স্থানে শুরু হয় মুখোমুখি যুদ্ধ । বেড়ী বাঁধে রণাঙ্গনে ১৫ নম্বর স্লুইস এর সেই যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আমান উল্যা ( ফারুক) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র এবং নোয়াখালী চৌমুহনী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ছালেহ আহাম্মদ মজুমদার , টগবগে তরুন মোস্তফা কামাল ভুলু, আবদুর রব বাবু, আক্তারুজ্জামান লাতু  ও ইসমাঈল মুক্তিপাগল সাধারণ মানুষ যারা সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে স্বতস্ফহর্ত সঙ্গে দিয়েছিলেন তারাও ৩ জন শহীদ হয়েছিলেন । গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবু নাছের সহ অনেকে। ছালেহ আহম্মদ মজুমদার, ইসমাঈল এবং আক্তারুজ্জামান লাতুকে যে স্থানে দাফন করা হয় মোট এখান মুক্তিযোদ্ধা বাজার নামে পরিচিত । বেড়ী বাঁধের সেই রনাঙ্গন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালের ইতিহাসে আরেক রক্তাক্ত প্রান্তর । নয়জন বীরের রক্ত দিয়ে লেখা ৪ সেপ্টেম্বর,১৯৭১।

 

বীরমুক্তিযোদ্ধা ক’’জন ঃ      মুক্তিযোদ্ধা বীর সেনানী নুরুল হক যিনি জম্মেছেন কোম্পানীগঞ্জের এক অজপাড়া গাঁয়ে । মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে বীর উত্তম উপাধিতে ভহষিত করা হয়। কোম্পানীগঞ্জের আরেক সস্তান চরকাঁকড়া সুবেদার আবুল হাসেম বীর প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে এই সৈনিক ক্লান্তিহীন যুদ্ধ করেছেন। যেন যেখানেই যুদ্ধ সেখানেই এই বীর সেনানী ।কোম্পানীগঞ্জের আরেক কৃতী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কাদের । ছাত্রলীগ নেতাবই তরুন ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানীগঞ্জ থানা বি এল এফা তথা মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। তাঁর কমান্ডে ৭ ডিসেম্বর,১৯৭১ কোম্পানীগঞ্জ মুক্ত হয় ।  

 

মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক ঃ কোম্পানীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন যাঁরা তাদের মধ্যে এমপি আবু নাছের চৌধুরী, আলী ইমাম চৌধুরী আবু ছালেহ গোলাম মহিউদ্দিন এমদাদুল হক খান, ডা:নগেন্দ্র কর্মকার, সুবল মাষ্ঠার , নুর মোহাম্মদ সত্তদাগর, আহসান উল্যা, বজলুর রহমান, শাহ আলম বিএসসি, আবদুল মালেক , আবদুল খালেক , সিরাজ উদ্দিন ,ফরিদ উদ্দিন ভূঁইয়া , খালেদ মুমিন, ডা: বেলায়েত, ডা: নেয়াজুর রহমান, সদর পূর্বাঞ্চলের হাজী ইদ্রিস প্রমূখ উল্লগযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনে অবদান রেখেছেন কোম্পানীগঞ্জের তরুন ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, তিনি স্বাধীন বাংলা সরকারের পোষ্টমাষ্টার জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে জম্ম নামে ইংরেজি খবর পড়তেন।

 

শেষ কথা ঃ একটি সস্পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের আগামী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতেই স্বকৃতি দেয়া উচিত সেইসব অপেশাদার বেসামরিক যোদ্ধাদের যারা সম্পূর্ণ বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই নিজের মায়ের সম্মানের স্বার্থে যুদ্ধে করেছিলেন এবং জীবন দিয়েছিলেন । স্বীকৃতি দেয়া উচিত সেই সমস্ত সহ্যপ্রাণ লোকদের যারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন , খাদ্য দিয়েছিলেন, আর্থিক সাহায্য করেছিলেন এবং শুধুমাত্র এই কারণে হানাদার বাহিনী কিংবা তাদের দোসররা তাদের ঘরবাড়ি জ্বলিয়ে দিয়েছিলো, উদ্ধাস্ত্ত করেছিলো । মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পূর্নতা দিতেই ভুলে যাওয়া এই সমস্ত বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত ।

                                                                                                                                                          

তথ্যসূত্রঃ

  • ফিরেদেখা,১৯৯১ (অনলাইন সংক্ষণ )                                                                                            ( মোহাম্মদ রাহবার হোসেন)
  • মুক্তিযুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ-রফিকুল ইসলাম চৌধুরী                                                                                  অধ্যক্ষ , বামনী কলেজ
  • কোম্পানীগঞ্জ মিশন- সমকাল                                                                                                            কোম্পানীগঞ্জ,নোয়াখালী